সবচেয়ে পুরোনো পুজো: আদি মা, চাউলপট্টি (আনুমানিক ৩০০ বছরের পুরোনো পুজো)
অন্যতম পুরোনো পুজো: ১) মেজো মা, কাপড়েপট্টি (বর্ষ- ২৫২), ২) বুড়ি মা, ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলা (বর্ষ- ২২৭), ৩) ছোট মা, ভদ্রেশ্বর গঞ্জ (বর্ষ- ২১১)
সাদা সিংহ: চাউলপট্টি, কাপড়েপট্টি, লক্ষীগঞ্জ চৌমাথা ও লক্ষীগঞ্জ বাজার এই চার পুজোতেই দেবীর বাহন সাদা সিংহ।
বর্তমানে পুজোর সংখ্যা: এবছর অর্থাৎ ২০১৯এ চন্দননগর, মানকুন্ডু ও ভদ্রেশ্বর মিলিয়ে কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি অনুমোদিত মোট পুজোর সংখ্যা ১৭১টি।
বিসর্জন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী পুজোর সংখ্যা: এবছর অর্থাৎ ২০১৯এ বিসর্জন শোভাযাত্রায় অংশ নেবে ৭৬ টি পুজো কমিটি।
পথ নির্দেশ:
চন্দননগরে পুজো দেখতে
গেলে খুব একটা বেশি ম্যাপ না ঘাঁটলেও চলবে। মানকুন্ডু স্টেশনে নেমে জ্যোতির
মোড়ের দিকে এগোতে থাকলেই পরপর একই লাইনে অনেক পুজো দেখতে পাবেন। এরপর
জ্যোতির মোড়ে পৌঁছে ডানদিকে গেলে ভদ্রেশ্বর, বাঁদিকে গেলে চন্দননগর শহর ও
স্টেশনের দিক আর সোজা গেলে চন্দননগর শহরতলীর অন্যান্য পুজো দেখতে পাবেন।
আলোকসজ্জা:
উল্লেখযোগ্য দিক:
অনেকেই কলকাতার দুর্গাপুজোর সাথে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর তুলনা করে থাকেন, তবে এসব তুলনা নিছকই অমূলক। দুটি উৎসবেরই নিজস্ব আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্র যেমন সুষ্ঠ পরিকল্পনার দিক থেকে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো কলকাতার দুর্গাপুজোর চেয়ে একটু এগিয়ে থাকবে। যেমন ধরুন নবমীর রাতে আপনি রাস্তার ওপর কোনো
প্যান্ডেলে প্রতিমা দর্শন করে এলেন কিন্তু পরদিন অর্থাৎ দশমীর সকালে সেখানে গেলে আপনি শুধু রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে প্রতিমা দেখতে পাবেন, কোনো প্যান্ডেল চোখে পড়বে না। এটাই চন্দননগর, যেখানে পুজোর শেষদিনেই রাস্তা আটকে করা প্যান্ডেল খুলে ফেলতে হবে। কলকাতায় এসব ভাবা যায়! এছাড়া, কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল হয় যথেষ্ট চওড়া রাস্তায় এবং দর্শকও নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় থাকার। কিন্তু চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর procession এর রাস্তা কলকাতার রেড রোডের তুলনায় যথেষ্ট ছোট এবং ভিড় যথেষ্ট বেশী হওয়া সত্ত্বেও পুজো কমিটির ভলান্টিয়ারদের সহায়তায় সুষ্ঠভাবেই পুরো ব্যাপারটা মেটে।
থিম বিতর্ক:
বর্তমানে সবপুজোই বড্ড বেশী থিম নির্ভর হয়ে পড়ছে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোও বাদ পড়েনি। এমনকি এবছর বাগবাজারের ১৮৫ তম বর্ষের পুজোয় সেই পরিচিত একটানা লম্বা ঝাড়বাতির ঐতিহ্যের বদলে থিমের প্রবেশ দেখে একটু খারাপই লাগল। আসলে
২০১৯ এ লম্বা ঝাড়বাতিবিহীন অচেনা বাগবাজার |
পুজোয় সর্বত্র সাবেকিয়ানা ও সাধারণ প্যান্ডেলের মাঝে যখন প্রথম থিমের আবির্ভাব ঘটেছিল তখন মানুষ একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেয়ে থিমকে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন যদি সর্বত্র সাবেকিয়ানা উঠে গিয়ে থিম চালু হয়ে যায়, তাহলে আবার সেই একঘেয়েমিই ফিরে আসবে। আর সাবেকিয়ানাকে বাঁচিয়ে রাখার ভার পুরোনো পুজোগুলোকেই নিতে হবে।
আর একটা ব্যাপার বিগত কয়েকবছর ধরে খেয়াল করছি যে, কলকাতার দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলের থিম চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় দেখে অনেকে প্যান্ডেলে ঢুকেই নকল থিম বলে হাসাহাসি শুরু করছেন। তাদের জানা উচিত কলকাতার দুর্গাপুজোর বেশিরভাগ আলোকসজ্জা কিন্তু চন্দননগর থেকেই যায়। শিল্পের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য এই আদানপ্রদান প্রয়োজন। তাছাড়া একই থিম হলেও জায়গা আর প্রতিমা আলাদা হওয়ায় থিমের সৌন্দর্যের কিছুটা পরিবর্তন তো ঘটেই।
দশমীতে কারেন্ট অফ:
শুনেছি আগে নাকি দশমী আর একাদশীর দিন পুরো চন্দননগর অন্ধকার থাকতো। কারণ এত বড় বড় প্রতিমাগুলোকে লরিতে চাপিয়ে ঘোরানোর সময় যাতে
রাস্তার এপার ওপারের মধ্যে সংযোগকারী তারে আটকে না যায় তাই তারগুলো আগে থেকেই কেটে দেওয়া হতো। তবে এখন আধুনিক ব্যবস্থায় আর তার কাটতে হয়না, শুধু গলি থেকে মূল রাস্তায় ঠাকুর বের করার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর সব ঠাকুর মূল রাস্তায় চলে এলে এলেই বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেওয়া হয়। তাই এখন আর আগের মতো একটানা কারেন্ট অফ থাকে না। বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে। যেমন দশমীর দিন দুপুরের দিকে কারেন্ট অফ হয় আবার রাত ৮-৯টার মধ্যে কারেন্ট চলে আসে।
বিসর্জন শোভাযাত্রা:
আমার কাছে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, দশমীর রাতের বিসর্জন শোভাযাত্রা। বছরের পর বছর ধরে এত সুষ্ঠভাবে প্রতিমা ও আলোর procession
বাইরে থেকে পুজো কমিটির ভলান্টিয়ারদের নির্দেশ শুনে লরি চালকরা যেভাবে লরিগুলোকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যান তা যথেষ্ট প্রশংসার যোগ্য। চন্দননগরবাসীর কাছে এই শোভাযাত্রা ‘carnival’ নয় এ হলো ‘procession’. আর এই procession এ সুষ্ঠ পরিকল্পনার সাথে
বাগবাজারের শোভাযাত্রার গ্যাসবেলুন |
রয়েছে আন্তরিকতার ছোঁয়া। তবে রাস্তার ধারে চেয়ার পেতে বসে procession দেখার চেয়ে procession এর সাথে ঘুরলেই উৎসবের মজাটা নিতে পারবেন। যেসব পুজো কমিটি procession এ অংশ নেয় না, তারা দশমীর সকালেই স্ট্যান্ডঘাটে
প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দেয়। আর যারা procession এ অংশ নেয় তারা একাদশীর
সকালে procession শেষ করে যে যার পুজো প্রাঙ্গনে চলে যায়, তারপর সেখান থেকে
বিসর্জনের জন্য স্ট্যান্ডঘাটের দিকে যাত্রা শুরু করে।
ভাসানের পর কিছু সময়ের মধ্যেই দেবীর কাঠামো লরিতে তুলে যে যার পুজো প্রাঙ্গণের দিকে রওনা হয়ে যায়। শুরু হয় আবার একবছরের প্রতীক্ষা ও নতুন চিন্তাভাবনা।
সবমিলিয়ে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীপুজো একটা সম্পূর্ণ প্যাকেজ। যারা এতদিন চন্দননগরে শুধুমাত্র প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখেছেন কিন্তু procession দেখেননি, তারা অন্তত একবার procession দেখুন, তারপর দেখবেন বারবার আসতে ইচ্ছে করবে।
[ad_2]
Source link